রেস্তোরাঁ মালিকগণকে ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের (পোড়াতেলের) ক্ষতিকারক বিষয়াদি এবং এর যথাযথ ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রশিক্ষণের প্রতিবেদন
গত ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৩ বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম কর্তৃক মুয়েঞ্জার বাংলা প্রাইভেট লিমিটেড এর সহযোগীতায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার রেস্তোরাঁ মালিকগণকে নিয়ে ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের (পোড়াতেলের) ক্ষতিকারক বিষয়াদি এবং এর যথাযথ ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। উক্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার জনাব মোহাম্মদ ফারহান ইসলাম ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন কার্যালয়ের নিরাপদ খাদ্য অফিসার জনাব মোহাম্মদ বশির আহম্মেদ এবং মুয়েঞ্জার বাংলা প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান জনসংযোাগ ও যোগাযোগ কর্মকর্তা জনাব শামীম আহমেদ ।
প্রশিক্ষণের শুরুতে জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার জনাব মোহাম্মদ ফারহান ইসলাম সবার সাথে পরিচয় পর্ব সম্পন্ন করেন । এরপর তিনি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কর্মকান্ড এবং নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন। এরপর মূল আলোচনায় নিরাপদ খাদ্য অফিসার মানবসাস্থ্যে পোড়া তেলের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, পোড়া তেল বারবার ব্যবহার করলে শরীরে free radical-এর পরিমাণ বাড়তে পারে। যা আমাদের শরীরে নানা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এই free radical কখনও ক্যানসারের কারণও হতে পারে।পোড়া তেল ব্যবহার করলে শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ায় ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধা, হার্ট বা স্নায়ুর সমস্যা-সহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে। ব্যবহৃত তেলে একবার খাবার তৈরির পর আর ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে কী ধরনের তেল ব্যবহার করা হচ্ছে,তার উপর নির্ভর করে এটি কতবার ব্যবহার করা যাবে। কয়েকটি উপায় অবলম্বন করলে ব্যবহৃত তেলে পুনরায় রান্না করতে পারবেন। প্রথমে অবশিষ্ট তেল ঠান্ডা করা উচিত। তারপর সেই তেল একটি এয়ার টাইট কন্টেনারে রাখলে তেলের মধ্যে যে ক্ষতিকারক কণাগুলি থাকে তা সরে যায়। তেল পুনরায় ব্যবহার করার আগে রং এবং ঘনত্ব পরীক্ষা করা জরুরি। যদি তেল গাঢ় বা কালচে রং এবং ঘন হয় যায়, তবে এটিকে ব্যবহার না করাই ভালো। যদি তেল গরম করার সময় ধোঁয়া হয়ে যায় দ্রুত, তাহলে তা ফেলে দেওয়া উচিত। এই তেলে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক রাসায়নিক জমে থাকতে পারে। বিভিন্ন ভোজ্যতেলের পুষ্টিগুণ ও উপাদান ভিন্ন। সব তেল এক উচ্চ তাপমাত্রায় ভাঙে না। কিছু তেল দীর্ঘ সময় ধরে উনুনের আঁচে ভাঁজার জন্য উপযুক্ত। যেমন- সূর্যমুখী তেল, সয়াবিন তেল, চিনাবাদামের তেল, তিলের তেল, সরিষার তেল এবং ক্যানোলা তেল ইত্যাদি। অন্যদিকে অলিভ অয়েলের মতো তেলগুলো ভাজাপোড়ার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। এ তেল একবারই ব্যবহার করা যেতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রায় এ তেলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও খাদ্য নিরাপদতা বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় স্লাইডের মাধ্যমে প্রদর্শন করেন এবং নিরাপদ খাদ্য আইন ১৩(২) ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন । উক্ত প্রশিক্ষণে খাদ্য ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব মতামত, অভিজ্ঞতা ও সমস্যা তুলে ধরেন; জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার তাদের মতামতগুলো মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
এরপর বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন কার্যালয়ের নিরাপদ খাদ্য অফিসার জনাব মোহাম্মদ বশির আহম্মেদ । তিনি তাদের তেলের সঠিক ব্যবহার ও একবার কড়াইতে ঢালা তেল কয়বার ব্যবহার করা যাবে এবং কতক্ষণ ব্যবহর করা যাবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এছাড়াও খাদ্যকর্মীদের নিরাপদ খাদ্য, খাদ্য দূষক, নিরাপদ খাদ্য বাছাই, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার প্রস্তুত, সঠিক উপায়ে খাবার সংরক্ষণ, পরিবেশন , রেফ্রিজারেটর এর সঠিক ব্যবহার, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এছাড়াও নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩, বংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন বিধি প্রবিধি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান প্রদান করা হয়।
সবার শেষে বক্তব্য রাখেন মুয়েঞ্জার বাংলা প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান জনসংযোাগ ও যোগাযোগ কর্মকর্তা জনাব শামীম আহমেদ । তিনি রেস্তোঁরা মালিকগণকে টাকার লোভে অননুমোদিত কাউকে পোড়া তেলে বিক্রি করে জনস্বাস্থ্যের হুমকি তৈরি না করতে সবাইকে অনুরোধ জানান।তিনি বলেন, মুয়েঞ্জার বাংলা প্রাইভেট লিমিটেড আপনাদের থেকে সঠিক মুল্য দিয়ে পোড়া তেল সংগ্রহ করে এই তেল পরিবেশ বান্ধবভাবে রিসাইকেল করবে। তাই তিনি পোড়া তেল সংরক্ষণ করে মুয়েঞ্জার বাংলা প্রাইভেট লিমিটেডকে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করার আহ্বান করেন।
পরিশেষে নিরাপদ খাদ্য অফিসার খাদ্যকর্মীদের স্বত:স্ফূর্তভাবে খাদ্য নিরাপদতা বিষয়ক কর্মসূচি উপভোগ করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS