খাদ্যকর্মীদের নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণের প্রতিবেদন
গত ১১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি.তারিখ রোজ সোমবার সকাল ১১.০০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম জেলার বাশঁখালী উপজেলার শুটঁকি ব্যবসায়ী এবং ব্যবসা সংশ্লিষ্টদের নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ।
উক্ত প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো: মিজানুর রহমান, পরিচালক( উপসচিব) খাদ্য পরীক্ষাগার নেটওয়ার্ক ও সমন্বয় বিভাগ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মদ ফারহান ইসলাম, জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার, চট্টগ্রাম।
প্রশিক্ষণের শুরুতে জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার জনাব মোহাম্মদ ফারহান ইসলাম সবার সাথে পরিচয় পর্ব সম্পন্ন করেন । এরপর তিনি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কর্মকান্ড এবং নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন। এরপর মূল আলোচনায় নিরাপদ খাদ্য অফিসার বলেন, ভোজনরসিক বাঙালির বিরাট এক অংশের ভীষণ পছন্দের খাবার শুঁটকি। লবণ মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা এই শুঁটকি খেতে দারুণ সুস্বাদু। নিঃসন্দেহে এটি প্রোটিনের ভালো উৎস। কিন্তু মুশকিল হলো সেসব শুঁটকি নিয়ে, যা তৈরিতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কোনো শুঁটকিতে অত্যধিক লবণ থাকে। এগুলোও খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। তিনি স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু কথা বলতে গিয়ে বলেন,
পোকা ধরা ঠেকাতে শুঁটকিতে রাসায়নিক বা কীটনাশক মেশানো হয়ে থাকলে, তা ক্ষতিকর। রাসায়নিকের ধরনের ওপর নির্ভর করে ক্ষতির মাত্রা। কোনো শুঁটকি খাওয়ার পর পেটের পীড়ায় ভুগতে হতে পারে। কোনোটির কারণে কিডনি, লিভার কিংবা ত্বকের ওপরও পড়তে পারে বিরূপ প্রভাব। ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়—এমন রাসায়নিকও এখন শুঁটকিতে ব্যবহার করা হয়।
শুঁটকিতে অতিরিক্ত লবণ থাকলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে, যা থেকে পরে হৃদ্রোগ এবং স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে।
যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগে ভুগছেন, তাঁদের প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে খানিকটা বিধিনিষেধ থাকে। এমন রোগী যদি শুঁটকি খান, তাহলে সেদিনকার খাদ্যতালিকা থেকে অবশ্যই অন্য কোনো প্রোটিনজাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে।
শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তি থাকলে শুঁটকি খেতে নিষেধ করা হয়।
এরপর বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো: মিজানুর রহমান, পরিচালক( উপসচিব) খাদ্য পরীক্ষাগার নেটওয়ার্ক ও সমন্বয় বিভাগ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তিনি সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও পরিবেশনের সাথে জড়িত সকলকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়ার বিষয়ে অনুরোধ জানান। কোনো খাদ্য ব্যবসায়ী এই নিম্নমানের ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করলে সে ব্যাপারে উপজেলাও জেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সবাইকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, শুঁটকিপ্রেমীরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন। রাসায়নিক মেশানো রয়েছে কি না, এই সন্দেহের দোলাচলে কি শুঁটকি খাওয়া ছেড়েই দিতে হবে? স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর কিছু উপায় বলতে গিয়ে বলেন,
শুঁটকি কেনার সময় ঘ্রাণটা ভালোভাবে খেয়াল করুন। রাসায়নিক দেওয়া থাকলে শুঁটকির মূল ঘ্রাণ ছাপিয়ে রাসায়নিকের ঘ্রাণটা নাকে আসবে। ঘ্রাণে ভিন্নতা থাকলে সেই শুঁটকি কিনবেন না। যেকোনো জায়গা থেকে শুঁটকি না কিনে চেনা জায়গার বিশ্বস্ত মানুষের তৈরি শুঁটকি কিনতে পারেন।
বাড়িতে শুঁটকিগুলো কিছুক্ষণ লবণ-পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। রান্নার আগে সময় নিয়ে খুব ভালোমতো ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন শুঁটকি।
রান্না করার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় চুলায় রাখুন।
শুঁটকি রান্নার সময় লবণ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। যে লবণ শুঁটকিতে রয়েছে, তা-ই পর্যাপ্ত। লবণ কম দিলে কারও কারও কাছে অবশ্য স্বাদের কমতি অনুভূত হতে পারে। স্বাদ বাড়ানোর জন্য চাইলে অন্যান্য সুস্বাদু মসলা যোগ করতে পারেন।
প্রতিদিন শুঁটকি না খাওয়াই ভালো। খেতেও হবে পরিমিত। তা ছাড়াও শুঁটকি দেখতে অস্বাভাবিক লাগলে (যেমন রংটা ভিন্ন মনে হলে) কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত বলেই জানালেন তিনি।
তিনি শুটকিঁ ব্যবসায়ীদের শুটকি ক্রয় ও বিক্রয়ে সতর্ক থেকে ব্যবসা পরিচালনা করতে পরামর্শ দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
পরিশেষে নিরাপদ খাদ্য অফিসার শুটঁকি ব্যবসায়ীদের স্বত:স্ফূর্তভাবে খাদ্য নিরাপদতা বিষয়ক কর্মসূচি উপভোগ করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস