Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের নিরাপদতায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সচেতনতামুলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।
বিস্তারিত

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের নিরাপদতা বিষয়ক সেমিনারের প্রতিবেদন।

এলাহী কারবার! খাবার নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি। কার আগে কে বসবেন তা নিয়ে চলছে হইচই। একদল খেয়ে উঠতে না উঠতেই আরেক দল চেয়ারের পেছনে এসে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। এটাই হলো চট্টগ্রামের মেজবানের খুবই পরিচিত চিত্র। 

বিয়ে-শাদী কিংবা ঘরোয়া আড্ডা। খাবার টেবিলে নানান পদের মেনুতে চট্টগ্রামের মেজবানের মাংস থাকা যেন বহু বছরের পুরোনো ঐতিহ্য। যারা খেতে ভালোবাসেন, তারা চট্টগ্রাম এসে মেজবানের মাংসের স্বাদ নেবেন না- এমনটি কখনই হয়নি। গরম ভাত, সঙ্গে গরুর মাংস। মাংসের ভেতর কালো ভুনা চাই। ছোলার ডালে মেশানো হয় কিছু বাড়তি মাংস। কখনো হাড়। খাবার শেষে আবার গরুর নলা (পায়ের হাড়)। আর এ মেজবানের নিরাপদতা বিষয়ে গত ৯ মার্চ ২০২৫ জনসচেতনতামুলক সেমিনার আয়োজন করনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জেলা কার্যালয়, চট্ট্রগাম। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জনাব সুজন কান্তি দাশ, সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিসিএসআইআর, চট্টগ্রাম ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুর আজম ইউসুফ, উপসহকারী প্রোগ্রামার, জেলা আইসিটি অফিস। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জনাব মোহাম্মদ ফারহান ইসলাম, নিরাপদ খাদ্য অফিসার, জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম।

প্রধান অতিথি:

১২০০ বছরের ঐতিহ্য!: তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের মাংসের প্রচলন কবে সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই গবেষকদের কাছে। তবে ইতিহাসের নানান জায়গায় 'মেজোয়ানি' ও 'মেজমান' শব্দ দুটো পাওয়া যায়। ইতিহাসবিদ ড. আবদুল করিম তার গবেষণা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, নবম শতাব্দীতে চট্টগ্রামের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ ছিল। মানে ১২০০ বছর আগে এই অঞ্চলে তাদের আসা-যাওয়া শুরু হয়।আর এই আরবদের হাত ধরেই চট্টগ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠে মেজবানের মাংস-এমনটাই মনে করেন রন্ধনশিল্পী ও খাবার গবেষকরা।

অনেকেরই ধারণা গরুর মাংস খেলেই বুঝি স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। গরুর মাংসে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকায় অনেকেই সেটি খাওয়া এড়িয়ে চলেন। কিন্তু পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, গরুর মাংসের ক্ষতিকর দিক যেমন আছে, তেমনি এই মাংস অনেক উপকারও করে থাকে। এবং গরুর মাংসে যতো পুষ্টিগুণ আছে সেগুলো অন্য কোন খাবার থেকে পাওয়া কঠিন। এখন এই মাংস আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না উপকারী, সেটা নির্ভর করবে আপনি সেটা কতোটা নিয়ম মেনে, কি পরিমাণে খাচ্ছেন।

গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ

পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, গরুর মাংসে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিনস, মিনারেলস বা খনিজ উপাদান যেমন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়রন। আবার ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি২ বি৩, বি৬, এবং বি১২। আর এই পুষ্টিকর উপাদানগুলো

•রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

•পেশি, দাঁত ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে।

•ত্বক/চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

•শরীরের বৃদ্ধি ও বুদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

• ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।

•দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।

•অতিরিক্ত আলসেমি/ ক্লান্তি বা শরীরের অসাড়তা দূর করে কর্মোদ্যম রাখে।

•ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।

•রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।

•খাবার থেকে দেহে শক্তি যোগান দেয়।

•স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।

•অবসাদ/ মানসিক বিভ্রান্তি/ হতাশা দূর করে।

গরুর মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। মগজ ও কলিজায় প্রোটিন থাকলেও সেটার পরিমান কম, বরং এর বেশিরভাগ জুড়ে রয়েছে কোলেস্টেরল।

ধরলাম একজন মানুষের আদর্শ ওজন ৫০ কেজি।তিনি যদি সুস্থ থাকেন তাহলে প্রতিদিন তার ৫০ গ্রামের মতো প্রোটিন প্রয়োজন, তবে যদি তার কিডনি জটিলতা থাকে তাহলে তিনি প্রতিদিন ২৫ গ্রাম প্রোটিন খাবেন। মানে স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক।আবার মেয়েদের মাসিক চলাকালীন কিংবা গর্ভবতী অবস্থায় এই পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।অর্থাৎ আদর্শ ওজন ৫০ কেজি হলে তারা ১০০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন খেতে পারবেন।যাদের ওজন আদর্শ ওজনের চাইতে কম তাদেরও বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন।তবে কারোই প্রতিদিন ৭০ গ্রামের বেশি এবং সপ্তাহে ৫০০ গ্রামের বেশি প্রোটিন খাওয়া উচিত না বলে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জানিয়েছে।প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ২ গ্রাম ফ্যাট থাকে। তার মানে প্রতিদিনের এই প্রোটিনের চাহিদা পূরণে কি আপনি ২৭০ গ্রাম মাংস খাবেন? একদমই না। কেননা দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা একটি খাবার নয় বরং বিভিন্ন খাবার ও পানীয় দিয়ে আমরা পূরণ করে থাকি।

 সভাপতি:

 সেমিনারের সভাপতি তার বক্তব্যে অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানিয়েছেন, অতিরিক্ত গরুর মাংস শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। কারণ গরুর মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। আর উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। গরুর মাংসে যে কোলেস্টেরল থাকে সেটি বেশি বেড়ে গেলে হার্টের শিরায় জমে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দেয়। এতে হার্টে পর্যাপ্ত রক্ত চলাচল করতে পারে না, অক্সিজেনের অভাব হয়। যার কারণে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। আর্কাইভ অব ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা গরুর মাংস বেশি খান তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এছাড়া গরুর মাংস বেশি খেলে টাইপ-টু ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।তাই গরুর মাংস যদি খেতেই হয় তার আগে বিশেষজ্ঞের থেকে জেনে নিন আপনার জন্য কতোটুকু গরুর মাংস প্রযোজ্য।

তাই মেজবানে গেলেই যে, অতিরিক্ত খেতে হবে সেটা নয়, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় আমাদের খেতে হবে। সভাপতি উপস্থিত সবাইকে সেমিনারে আসার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

ছবি
প্রকাশের তারিখ
09/03/2025
আর্কাইভ তারিখ
30/04/2027